Discuss Forum
1.
আজ ২৯ জুলাই। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১২৪তম মৃত্যুদিবস। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে তিনি মারা যান।ভারতীয় উপমহাদেশে উনিশ শতকের নবজাগরণের মধ্য দিয়ে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে। ওইসময় বহুকীর্তিমান বাঙালির পদপাতে মুখরিত হয়েছিল। আর এই নবজাগরণের প্রধান চরিত্র বিদ্যাসাগর। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।
বাংলা গদ্য ভাষাকে গড়ে তোলা এবং শিল্পিত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শুধু কি গদ্য প্রণয়নের রূপরেখাই প্রণয়ন করেছিলেন? না। বাংলা বাংলা বর্ণমালার আধুনিক রূপ দিয়েছেন, প্রণয়ন করেছেন বাংলা ভাষার ব্যাকরণ।
ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন ইংরেজ সরকারের বড় শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের পাশাপাশি এদেশের মানুষের কথা ভেবেছেন। তিনি জানতেন ইংরেজি শিক্ষা ছাড়া মুক্তি অসম্ভব তাই তিনি এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছিলেন। এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে অসংখ্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ‘আহমদ শরীফ অধ্যাপক চেয়ার’ আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, যখন ঈশ্বরচন্দ্রের কর্মজীবন শুরু হয় বাংলা গদ্য তখনও খুব পরিচ্ছন্ন রূপ লাভ করেনি, তিনিই সর্বপ্রথম বাংলা গদ্যের একটি পরিচ্ছন্ন রূপ দেন। এজন্য বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। বাংলা গদ্য ভাষাকে গড়ে তোলা এবং ভাষাকে শিল্পিত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। বাক্যে কর্তা, কর্ম, করণ, ক্রিয়া’র ব্যবহার কীভাবে হবে তা তিনি ঠিক করেছেন। শুরুতে বাংলা বর্ণমালা বর্তমানের রূপে ছিল না, এটি ছিল বিক্ষিপ্ত আকারে। বিদ্যাসাগর এটিকে একটি রূপ দিয়েছেন, মোটামুটি সেটিই এখনও চলছে।
অধ্যাপক আবুল কাসেম আরো বলেন, বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। যদিও এ কলেজে মূল পাঠ্য ছিলো হিন্দু ধর্ম, হিন্দু শাস্ত্র, তবুও তার চিন্তা ভাবনার বিকাশ ঘটেছিলো ঈশ্বর ও অলৌকিকতাকে বাদ দিয়ে। তিনি বাংলার মানুষকে ধর্ম ও পরকালীন জীবনের চিন্তাধারার সীমাবদ্ধতা থেকে বের করে ইহজাগতিক কল্যানের কথা ভাবতে উদ্ভুদ্ধ করেন। যাকে ইংরেজিতে বলে “স্যাকুলারিজম”, যার মানে হলো ইহলৌকিকতা। অনেকেই এটিকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলেন, এটি যথাযথ নয়।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, যাকে আমরা সাহিত্য বলি সেটা বিদ্যাসাগরই এক অর্থে প্রথম শুরু করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তার প্রকাশিত গ্রন্থ ’বেতাল পঞ্চংবিংশতি’কেই আমরা বাংলা ভাষায় আধুনিককালে লেখা প্রথম সাহিত্যিক গদ্য বলি। এরপরে তিনি আরো কিছু বই অনুবাদ করেছিলেন সংস্কৃত এবং ইংরেজি থেকে। তারা এই কাজের মধ্য দিয়ে একদিকে আমরা বাংলা ভাষায় অন্য ভাষার সাহিত্য পেলাম অন্যদিকে বাংলা ভাষায় সাহিত্যকর্ম লিখন পদ্ধতির একটা নমুনাও পাওয়া পেলাম। বাংলা ভাষায় এর সুগভীর প্রভাব রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে বড় অবদান বলে যেটিকে উল্লেখ করা হয় তা হলো বাংলা গদ্যে। উনিশশতকে এক ধরেনের নতুন গদ্য লেখা শুরু হয়েছিলো, সেই গদ্যটা ছিলো একটু বিকট, একটু খারাপ। কতগুলো সংস্কৃত শব্দ, নতুন ধরনের বাক্য তখনও ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে নাই। ওই বিকট গদ্যটা গুছিয়ে কিভাবে সুশৃঙ্খল এবং শিল্পসম্মত হতে পারে তা দেখাতে পেরেছেন। এজন্য রবীন্দনাথ ঠাকুর বলেছিলেন বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী।
- A.
- B.
- C.
- D.
Answer: Option False
Explanation:
Post your comments here: