1 . সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ ভূমিকা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে বোঝায় সমাজের বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি এবং জাতির মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ঐক্য। এটি একটি দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নতির প্রধান উপাদান। বাংলাদেশ একটি বহু ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর দেশ। আমাদের দেশ জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। যদিও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় সম্প্রীতির চেতনায় ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি গৌরবময় অধ্যায়। হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখা যায়। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব যেমন ঈদ, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধ পূর্ণিমা এবং বড়দিনে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার যে দৃশ্য দেখা যায়, তা আমাদের সম্প্রীতির পরিচায়ক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি দেশের শান্তি ও উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করে। সম্প্রীতি বজায় থাকলে দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয় এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটে। অন্যদিকে, সাম্প্রদায়িক বৈষম্য ও সংঘাত একটি জাতির অগ্রগতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘ ঐতিহ্য থাকলেও বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে সম্প্রীতিকে ভাঙার চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো এবং ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দেওয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করা হয়। এ ধরনের ঘটনা দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় করণীয় ১. ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতা বৃদ্ধি: বিভিন্ন ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে মানুষকে জানাতে হবে এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করতে হবে। ২. সাংস্কৃতিক বিনিময়: বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে হবে। ৩. কঠোর আইন প্রণয়ন: সাম্প্রদায়িক উস্কানি বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। ৪. গণমাধ্যম ও সামাজিক দায়িত্ব: গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫. সামাজিক ঐক্য জোরদার: সমাজের সকল স্তরে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রীতির গুরুত্ব শেখাতে হবে। উপসংহার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই সম্প্রীতি বজায় রাখার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত জাতিতে পরিণত করতে পারি। আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সচেতন হওয়া এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চা করা অপরিহার্য। সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। তাই, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি এবং একটি সম্প্রীতিময় বাংলাদেশ গড়ে তুলি। সারসংক্ষেপ: বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের গর্বের বিষয়। এটি রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সামাজিক ঐক্যের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে হবে।

  • Attach answer script
View Answer Discuss in Forum Workspace Report