ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। অর্থাৎ সমুদ্র -> থেকে আহরণকৃত যে কোনো সম্পদ, যা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তাই ব্লু-ইকোনমির পর্যায়ে পড়েবে। সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামের অধ্যাপক গুন্টার পাউলি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে সুনীল অর্থনীতির ধারণা দেন। সমুদ্র পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। মৎস্যসম্পদের মাধ্যমে সমুদ্র খাবারের চাহিদা মেটায় এবং পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। অর্থাৎ, সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যে কোন সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তাই ব্লু -ইকোনমির বা সুনীল অর্থনীতির পর্যায়ে পড়বে। বিংশ শতাব্দীজুড়ে পরিবেশগত নানা আন্দোলন ও সম্মেলন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে একের পর এক পরিবেশবান্ধব মডেল। এসব মডেলের মধ্যে গ্রিন ইকোনমি মডেল বা সবুজ অর্থনীতি মডেল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল এই মডেলের অধিকতর সম্প্রসারণের। গ্রিন ইকোনমি মডেলের পরবর্তী ধাপ তথা সম্প্রসারণই ব্লু ইকোনমি নামে পরিচিত, যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে ইতোমধ্যেই পৃথিবীজুড়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ভবিষ্যতের অর্থনীতির রূপরেখা প্রণয়নের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক আমন্ত্রিত হন। বিস্তারিত আলোচনা, গবেষণা আর নিজের অধীত জ্ঞানের মিশ্রণ ঘটিয়ে পাউলি একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে ব্লু ইকোনমির ধারণা দেন। গত দুই দশকের নানা পরিমার্জন-পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমি মডেল আজ একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা। নতুন এই মডেলের আদ্যোপান্ত তুলে ধরতে অধ্যাপক পাউলি ২০১০ সালে প্রকাশ করেন তার সাড়া জাগানো গ্রন্থ ‘"The Open Source from the Source".’ মোট ১৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বইটিতে ধাপে ধাপে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ব্লু ইকোনমির পেছনের তত্ত্ব, তথ্য ও তার প্রয়োগ। নতুন এই মডেল সাদরে বরণ করে নিচ্ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের উদ্যোক্তারা। স্থানীয় প্রযুক্তি, নিজস্ব অভিজ্ঞতা আর ব্লু ইকোনমি মডেলের তত্ত্বীয় জ্ঞানের মিশেল ঘটিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন করা হচ্ছে অভিনব নানা ব্যবসা পদ্ধতির। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এসব ব্যবসা আর্থিকভাবেও লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে।