বাহাত্তরে ধরা (বাগধারা):
অর্থ: কঠিন বিপদে পড়া বা বড় ধরনের সমস্যায় জড়িয়ে পড়া।
উৎপত্তি: এই বাগধারার উৎপত্তি ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের "বাহাত্তরের মন্বন্তর" থেকে। সেই সময় বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যার ফলে লক্ষাধিক মানুষ অনাহারে মারা যায়। সেই দুর্ভিক্ষের স্মৃতি থেকেই "বাহাত্তরে ধরা" বলতে খুব বড় বিপদ বা দুর্দশায় পড়াকে বোঝানো হয়।
অর্থ প্রসঙ্গে: যখন কেউ বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে, তখন তাকে "বাহাত্তরে ধরা" বলা হয়।
বাহাত্তরের মন্বন্তর:
বাংলায় ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ১১৭৬ থেকে ১১৭৮) এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়, যা "বাহাত্তরের মন্বন্তর" নামে পরিচিত। এটি মূলত ফসলহানি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ব্রিটিশ শাসনাধীন কোম্পানির শোষণের ফলে সৃষ্ট হয়েছিল। বাংলার গ্রামাঞ্চলে ধানসহ অন্যান্য ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার কারণে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয় এবং লক্ষাধিক মানুষ অনাহারে মারা যায়। দুর্ভিক্ষে জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য সাহায্য না করে শস্য রপ্তানির উপর জোর দেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।
বাহাত্তরের মন্বন্তর নিয়ে কিছু উক্তি:
উইলিয়াম হান্টার (ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ): “বাহাত্তরের মন্বন্তরে বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তা ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি। মানুষজন খেয়ে বাঁচার জন্য শকুনের মতো মৃতদেহ খুঁজত।”
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর: “বাহাত্তরের মন্বন্তর শুধু ফসলের অভাব নয়, এটি ছিল শাসকদের উদাসীনতার নিষ্ঠুর দলিল।”
বিপিন চন্দ্র পাল (রাজনৈতিক নেতা এবং ইতিহাসবিদ): "বাংলার মন্বন্তর আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শাসকশ্রেণীর অবহেলা এবং শোষণ কীভাবে লক্ষ মানুষের জীবনকে ধ্বংস করতে পারে।"
মন্বন্তরের প্রভাব:
- অনেক লোক অনাহারে মারা যায়।
- বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে এবং শহর ও গ্রামগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে।
- অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ে, এবং সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।