ঢাকার যানজট নিরসনে করণীয়
বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় যানজট সমস্যা একটি মরণব্যাধি সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এই মরণব্যাধি যেন অক্টোপাসের মতো নগরবাসীর ওপর চেপে বসে আছে। কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না এই যানজট নামক মরণব্যাধি। রাজধানীর প্রতিটি সড়ক, অলিগলি, গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় লেগে থাকছে এ সমস্যা। এ সমস্যা নগরবাসীকে দিনের পর দিন অতিষ্ঠ করে তুলছে; বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী এবং নিম্নআয়ের মানুষ বেশি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। যেখানে যেতে ১৫ মিনিট বা আধাঘণ্টা সময় লাগার কথা, যানজটের কারণে সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। অফিস যেখানে শুরু সকাল ৯টা থেকে, সেই অফিসে পৌঁছাতে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। অর্ধেক সময় রাস্তায় কাটাতে হয় যানজটের কারণে। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের হলে যেতে হয় ভোরবেলায়; ফলে ভালোমতো প্রস্তুতি নেয়াও সম্ভব হয় না। এই যানজটের কারণে সার্বিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা দিনের পর দিন ব্যাহত হতে চলেছে। অবৈধভাবে ফুটপাত দখল, বর্ষা মওসুমে অতিরিক্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে প্রবল বৃষ্টিপাতে সড়কগুলোর বেহালদশা, গাড়ি-ট্রাক-প্রাইভেট গাড়িগুলোর যত্রতত্র পার্কিং, জায়গায় জায়গায় বাস থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা, গাড়ি চালানোর সময় চালকদের বিরামহীন প্রতিযোগিতা, গাড়িচালকদের অদক্ষতা, ট্রাফিক আইন ঠিকমতো না মানা এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় রেলক্রসিং থাকার দরুন বারবার ট্রেন আসা-যাওয়া করা ইত্যাদি হচ্ছে যানজট বৃদ্ধির কারণ। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে; কিন্তু সে তুলনায় রাস্তার সংখ্যা বাড়েনি। দেশের মানুষ যানজট নামক এই অসহনীয় মরণব্যাধি থেকে দ্রুত মুক্তি চায়। তারপরও যেন এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলছে না। এ সমস্যা পরিবহন ব্যবস্থাকে একেবারেই পর্যুদস্ত করে দিয়েছে। সমস্যা নিরসনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। ঢাকামুখী জনস্রোত বন্ধ করতে প্রয়োজনে ক্ষমতা ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সড়কের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে তার আগে প্রয়োজন ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ঈমান; তথা ধর্মবিশ্বাসকে মানবতার কল্যাণে কাজে লাগিয়ে সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য, ন্যায় ও হক্বের পক্ষে ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। মানুষ যদি ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা ফিরে পায়, যদি বুঝতে পারে তাকে পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্দেশ্য কী, কোন কাজটি তার প্রকৃত ইবাদত এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে সকল স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে জাতির কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করা হয়, তাহলে ধর্মের প্রকৃত আদর্শের ভিত্তিতে যে কোনো বৃহৎ সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে যাবে। তাহলেই যানজট সমস্যা দূর হবে। এই কাজ শুধুমাত্র সরকার ও প্রশাসনের একার নয়, ১৬ কোটি মানুষের ঈমানী ও ধর্মীয় দায়িত্ব এবং অন্যদিকে সামাজিক কর্তব্য।